দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
নাম তাঁর সুকেন সরকার (৪০)। খাবারের এক হোটেলে কাজ করে জীবিকার্জন করতেন। করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে চলছে লকডাউন। লকডাউনে হোটেল বন্ধ। কাজও বন্ধ। এতে কর্মহীন দিন কাটাচ্ছিলেন এই যুবক।
তাই তিনি দুর্ঘটনা রোধে ও যানযট নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাশ্রমে ট্রাফিক পুলিশের কাজ করছেন। তিনি কুষ্টিয়া – রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কস্থ কুমারখালীর ব্যস্ততম চৌরাস্তা এলাকায় ট্রাফিকের কাজ করছেন।
সুকেন সরকার কুমারখালী পৌরসভার সেরকান্দি এলাকার মনোরঞ্জন সরকারের ছেলে। পরিবারে তাঁর বাবা, মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। প্রায় ১৫ দিন ধরে তিনি এই দাঁয়িত্ব পালন করছেন। তবে কোনো সম্মানী বা ভাতা পাচ্ছেন না।
স্থানীয়রা জানায়, কুমারখালী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন চৌরাস্তা একটি ব্যস্ততম স্থান। এর পশ্চিমের ১২ কিলোমিটার কুষ্টিয়া জেলা শহর, দক্ষিণে ৫০০ মিটার দুরে কুমারখালী থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পৌরসভা ও প্রধান শহর। দক্ষিণের ৩০০ মিটার দুরে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর আর পূ্র্বদিকে গেল রাজবাড়ী সড়ক।
ফলে সব সময় যানবহন, যানযট আর জনসমাগম লেগেই থাকে গোলচত্ত্বর এলাকায়। কিন্তু সেখানে কোন ট্রাফিক পুলিশ বা কর্তব্যরত ব্যক্তি নেই। প্রায়ই ঘটে সড়ক দুর্ঘটনায়। প্রায় তিনমাস পূর্বে ওপেন হাউজ ডে কর্মসূচিতে এলাকাবাসীর দাবি তোলেন ট্রাফিক পুলিশের।
গত ক’দিন আগে ওপেন হাউজ ডে কর্মসূচির প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা পুলিশ সুপার মোঃ খাইরুল আলম প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগের। কিন্তু তিনমাসেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
আরো জানা গেছে, কুমারখালী গোলচত্ত্বর একটি ব্যস্ততম স্থান। কুষ্টিয়া – রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের উন্নয়ন কাজের পর ব্যস্ততা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে প্রায়ই ঘটে সড়ক দুর্ঘটনা। সাম্প্রতিক সময়ে একজন যুবক সেখানে ট্রাফিকের দাঁয়িত্ব পালন করছে। অথচ সে নিজেই জানেনা ট্রাফিক পুলিশের দাঁয়িত্ব সমন্ধে।
এব্যাপারে সুকেন সরকার বলেন, একটি হোটেলে কাজ করতাম। লকডাউনে হোটেল বন্ধ। কর্মহীন। আর গোলচত্ত্বর এলাকায় যানযট বেশি। মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনা ঘটে। তাই যানযট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। তবে কোন ভাতা বা সম্মানী পাইনা।
কুমারখালী পৌরসভার ৫ নং কাউন্সিলর এস এম রফিক বলেন, বাসস্ট্যান্ড এলাকাটি খুবই ব্যস্ততম। সব সময় যানযট, যানবহন ও জনসমাগম থাকে। কিন্তু কোন ট্রাফিক পুলিশ নেই। ফলে প্রায় ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। তিনি আরো বলেন, পুলিশ সুপার মহোদয় ট্রাফিক নিয়োগের কথা দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনমাসেও বাস্তবায়ন হয়নি।
কুমারখালী পৌরসভার মেয়র সামছুজ্জামান অরুন বলেন, গোলচত্ত্বরে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়া – রাজবাড়ী সড়ক সংস্কারের পর যানবহন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ নেই। তিনি আরো বলেন, এক ওপেন হাউজ ডে প্রোগামে পুলিশ সুপার মহোদয় কথা দিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। নতুন করে পুনরায় এব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলা হবে।
কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মোঃ খাইরুল আলম সাংবাদিকদের এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কুমারখালী গোলচত্ত্বরে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। কিন্তু করোনার অতিমারি ও লকডাউনে তা বাস্তবায়ন হয়নি। আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই বাস্তবায়নে কাজ করা হবে।
Leave a Reply